প্রেম আর ভালোবাসা মহান মহান আর মহান! এই সিনেমাটা মোটেও ভালোবাসা নিয়ে নয়। খাঁটি প্রেম বলতে আমরা যা বুঝি তার সংজ্ঞা দিনে দিনে যেদিকে যাচ্ছে তারই প্রতিরূপ এই সিনেমায় দেখা যায়। একটা কথা বলতেই হয় সিনেমাটি দেখছিলাম আর বার বার ভাবছিলাম, শালা! কি লাইফ! নায়কেরই তো জীবন! আর আমরা পৃথিবীতে আসছি খইয়ের তেলে কমলা লেবু ভাঁজতে! লেবু যে চিপলেই হয় ওইটা কে জানতো! যাক সিনেমাতে অনর্থক অসম্ভব বিষয়াদি ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। ফিকশন দেখে নাহলে মজা পাবো কীভাবে?
প্রেমে ফিরে আসি। দিন যাচ্ছে, সময় বদলাচ্ছে, সাথে সাথে মানুষের স্বাদ আহ্লাদ ধ্যান ধারণাও পরিবর্তিত হচ্ছে। যদিও সিনেমাটার প্রেক্ষাপট কলকাতার এক মফস্বল শহর এর কলেজকে কেন্দ্র করে কিন্তু এর সাথে আমি কীভাবে জানি বাংলাদেশের ছাত্র সংস্কৃতিকে খুঁজে পাই। হইতো এইটা আজকের সময়ের নয়, কিন্তু ভবিষ্যতের নিশ্চিত। ৯০ দশক বলতে আমি বা আমরা যে প্রেম আবেগ খুঁজে পেতাম, এখন কিন্তু সেই প্রেম আবেগ একরকম নয়। অনেকেই বলতে পারে একরকম নয় আবার কি, এখন আর সেই প্রেম আবেগ নেই। আছে, তা অবশ্যই আছে তবে তার ধরন বদলে গেছে। আর এ কথাটা স্বীকার করতেই হবে যে, ধরনটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভয়ংকরভাবে বদলে গেছে।
"প্রেম টেম" অনেকটা চা-টার মতো হয়ে যাচ্ছে। চা এর সাথে বিস্কুট ডুবিয়ে খাওয়ার মজা প্রেম টেম করে বুঝা যায়। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে চা তো খেয়ে শেষ করে ফেলা যায়, তাহলে প্রেমটাও কি করে শেষ করে ফেলা যায়? প্রেমের সংজ্ঞাটা এতোটাই ছোট কেন হচ্ছে দিনদিন! হয় আমরা এই টার্মটায় বিশ্বাস করি না, অথবা এই টার্মটাই কাজে লাগাচ্ছি জিনগত জানোয়ারকে ঠাণ্ডা করার জন্য। যা ইতোমধ্যে অতি সভ্য জাতিগুলো কমিক সেন্সে নিষ্পাপ বলে দাবি করছেন বা করে ফেলেছেন এবং তা সার্টিফাইড হয়ে গিয়েছে বা হচ্ছে। এই সিনেমা দেখে মনে হচ্ছে তা স্বীকৃতির পথেই। আমাদের কালচারে কিন্তু এই সময়টা এসে যাবে। খুব তাড়াতাড়িই এসে যাবে। আমরা নস্টালজিক ৯০ দশক নস্টালজিয়া নস্টালজিয়া করবো আর নতুন শতক নতুন এর জয়জয়কার করবে। আমরা নষ্ট নষ্ট করবো আর তারা নম নম করবে।
বিষয়টা থেকে বের হয়ে আসা যাক। ঢালিউড আর টালিউড এর সিনেমার মধ্যে বিশাল পার্থক্যের জায়গা চিত্র নির্দেশনায়/আর্ট ডিরেকশনে। আমার কাছে মনে হয় রুচি সম্মত কিছু সৃষ্টির ক্ষেত্রে আর্টে যোগ্যতা আর সুরুচির বিকল্প কোনও পথ নেই। জঘন্য গল্প বলেও দর্শককে মনে হয় এর মাধ্যমেই ধরে রাখা সম্ভব। এই সিনেমার আর্ট ডিরেকশন যথেষ্টই ভালো ছিলো, নাহলে এই কুখাদ্য আমি পুরাটুকু দেখতে পারতাম না। সিনেমাটাকে কুখাদ্য বলছি কারণ গল্পকার আসলে কি বলতে চেয়েছেন এটা গল্পে স্পষ্ট না। সাবজেক্টটাও একদম ক্লিয়ার না। বুঝলাম যে মানুষের থেকে কুকুরের ভালবাসা আরও শক্ত তাই বলে কি বান্ধবীকে বাসায় আনবো মা বাসা থেকে বের হয়ে গেলেও! এখানে টার্মটা কিন্তু বান্ধবী, গার্লফ্রেন্ড না।
সিনেমা হিসেবে বলতে গেলে যা বললাম গল্প বলাটা যা তা হয়েছে। তবে প্রেজেন্টেশন খুবই সুন্দর। নির্মল, সুন্দর, সরল এবং আকর্ষণীয়। গানগুলো সুন্দর। কিউট কিউট ব্যাপারগুলো অনেক দিন মিস করছিলাম, আজকে দেখে মজা পেলাম। এই সিনেমাটা অনেকটা জাস্ট এনাদার মুভি বলে দেখা যেতে পারে। দেখা শেষ হলে প্রেম টেম, নাহলে অন্তত চা - টার মতো দেখে ফেলে দেওয়া যেতে পারে।
Comments