top of page
Search
Writer's pictureRahat Ahmed

The Dark Side of Dhaka (2021)



ঢাকা শহরের অলিগলিতে ঘটে যাওয়া প্রাত্যহিক জীবনের সাথে মিশে যাওয়া কিছু ভয়ংকর কিন্তু সত্য ঘটনা একত্র করে তাদের যোগসংযোশে গড়ে উঠা একটি সিনেমার গল্প এই "The Dark Side of Dhaka". নাম থেকেই ব্যাপারটি স্পষ্ট যে এই শহরের ভালো দিকগুলো এখানে উহ্য থাকবে। সিনেমাতে এই বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে ধরে রাখা হয়েছে। এইখানে সবচেয়ে ভালো লেগেছে কাহিনীগুলো যেভাবে প্রেজেন্ট করা হয়েছে। মোট পাঁচটি গল্প ছিলোঃ আয়না বিবির পালা, পালাবি কোথায়?, গোলাপী এখন ঢাকায়, অমানুষ এবং বন্ধু আমার। এগুলোর মধ্যে আসলে পারসোনাল ফেভারিট বের করা যায় না। সবগুলো গল্পই একই তালে মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম।


রায়হান রাফি পরিচালক হিসেবে নিজের অবস্থান আবারও জোরালো করলো এই সিনেমাটির মাধ্যমে। সহজভাবে গল্প বলতে পারা এবং দর্শকের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পারাটা মোটেও সহজ কাজ না। কিন্তু রায়হান রাফি তার প্রত্যেকটা কাজের মাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। আশা আরও বেড়ে গেলো এই নির্মাতার কাছে। সামনে এরকম বা এর থেকে অনেক ভালো কাজ উনার কাছ থেকে দেখবো ইনশাল্লাহ।


সিনেমাটিতে পাঁচটি গল্প একের পর এক বলা হয়েছে। তবে শেষের গল্পটি প্রত্যেকটি গল্পের বাই প্রোডাক্ট হিসেবে অগ্রসর হয়েছে। এরকম গল্পের প্যাটার্ন মোটেও নতুন নয়। কিন্তু তারপরেও এই গল্পের যে থ্রিল তা স্পষ্ট ছিলো। তা পুরোটা মুভিতে ধরে রাখা একটা কৃতিত্বের বিষয় বটে। কেননা এইরকম মুভিতে ঝুলে যাওয়া চলবে না, উত্তেজনায় ভরপুর রাখতে হবে। এখানে এই বিষয়টি বিদ্যমান ছিলো। অযথা সিনেমার ডিউরেশন বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়নি।


পাঁচটি গল্পে পাঁচধরনের পাপ দেখানো হয়েছে। তবে শাস্তি সবগুলোতে একই ছিলো, মৃত্যু। শেষগল্পে মৃত্যু দেখানো না হলেও তা সিনেমার কন্টেক্সট থেকে সহজেই বলা যায় পাপী বন্ধুর শাস্তি কি হবে বা হতে যাচ্ছে।



প্রথম গল্পে আসা যাক। বিবাহিত পুরুষ নিজের স্ত্রীকে উপেক্ষা করে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে রয়। কিন্তু তার জানা থাকে না যে বিশাল ভয়ঙ্কর ফাঁদে সে পা দিয়েছে। এটি আমাদের শহরের একটি কমন গল্প। আমরা এমনটা অনেক শুনেছি। কিন্তু এখানে সবচেয়ে মজার বিষয়টি ছিলো অপরাধীর পরিধি কখন যে বিস্তৃত হয়ে যায় তা হইতো অপরাধীও জানে না। মৃত্যু যেন ভাগ্যেই লিখা ছিলো। অপরাধীর আর অপরাধবোধের সুযোগও সেখানে থাকে না। ফিরে আসা সম্ভব নয়, কেন্দ্র এখন অনেক দূর, কেন্দ্র এখন অপরাধীর জন্য জাহান্নাম। আর পাপী পাপের শাস্তি ভোগ করে চলে। গল্পের সাথে রঙের একটা সম্পর্ক রয়েছে। লাল এই গল্পের সাথে ভালো লাগছিলো।



দ্বিতীয় গল্পে মিথ্যাকে মূল চরিত্রে তুলে ধরা হয়েছে। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। আর মিথ্যা বলা মহাপাপ। এক মিথ্যুকের নির্মম মৃত্যুর কাহিনী নিয়েই দ্বিতীয় গল্প সাজানো। মিথ্যা পাপীকে সারাজীবনে যেভাবে বাঁচায় মৃত্যুর আগমুহূর্তে যেন তা সেভাবেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। সত্য তখন মিথ্যার হাতে খুন হয়, যেভাবে সারাজীবন খুন হয়েছে। তাই মিথ্যাকে না বলুন, সত্যকে খুন না করুন।



গোলাপীর রঙ এখন আর গোলাপী হয় না। তার রঙ লাল রক্তের থেকেও লাল হয়ে গেছে। সিদাসাধা সরল মেয়েটা আর সরল নেই। সে এখন ধোঁকাবাজ, ধান্ধাবাজ, পতিতা। পুলিশও তাকে চিনতে ভুল করে। তার বন্ধুও তাকে চিনতে ভুল করে। তার বন্ধুতো আসলে আগুন। আগুনে খেলে পুড়তে হবে, মরতে হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। গোলাপী ভুলে যায় আগুনে তার জন্ম, এটাতেই তার মৃত্যু হবে।



অমানুষ তারাই যারা মানুষকে মানুষ ভাবে না। মানুষ তাদের কাছে বস্তু, ব্যবসা। তারা বন্ধুর বেশে আসে, পিশাচের বেশে যায়। তারা মানুষকে পাচার করে টাকার মতো। টাকাই যেন জীবন, মানুষ শুধু মায়া। মায়া, মমতা এদের জন্য বিষ। এদের চেনা যায় না, বুঝা যায় না, শাস্তি এদের হয় না, শাস্তি হয় পাপীর। পাপীর পাপ হয় চিনতে না পারার অক্ষমতা। পাপীর মৃত্যু এদের কষ্টও দেয় না, তারা তো পাপী না। তাই না?



এই গল্পটি পুরো সিনেমাটাকে যেন প্রাণ দিলো। বন্ধু আমার বন্ধু না রইলো, প্রেম আমার প্রেম না রইলো। রইলো শুধু ঘৃণা। প্রতিশোধ সেটাই তো শেষ চাওয়া। আমার বন্ধু, আমার প্রেম, জলে ভাসে, ডাঙ্গায় হাসে, আমি শুধু অপেক্ষায় বন্ধু ও প্রেমের সর্বনাশে।


দুর্দান্ত অপু সাহেব উনার অভিনয়ে। সকলের অভিনয় ছিলো দেখার মতো, কিন্তু রাশেদ মামুনুর অপু ছিলেন আলাদা। উনার জন্য অনেক অনেক ভালবাসা।


এই সিনেমার শিল্প নির্দেশনা যথেষ্ট স্মার্ট ছিলো, অনেক গোছানো ছিলো। গল্পে আর্ট এর ইমপ্যাক্ট স্পষ্টভাবেই ধরা পরছিলো।


বাংলা সিনেমা সামনের দিকে এগিয়ে যাক। অবশেষে এই আশাই রইলো।








186 views0 comments

Recent Posts

See All

Comments


Post: Blog2_Post
bottom of page