সিনেমা মানেই শুধু বলে যাওয়া না, বলে যাওয়ার কারণ অনুভব করানোও বটে। শক্ত অভিনেতাদের দিয়ে শক্ত স্ক্রিপ্ট এর কাজ। তবে সিনেমাটা বুঝতে হলে সিনেমাকে বুঝতে হবে। এইটা একজন সিনেমাওয়ালার পক্ষ থেকে অন্য সিনেমাওয়ালাদের সম্মান প্রদর্শনস্বরূপ। সিনেমা যারা বানায় তারা তো ফিল্মমেকার আর যারা সিনেমাটাকে ভালোবেসে, এটাকে পুঁজি করে নিজেদের পেট চালায় আর ফিল্মমেকারদের পেট চালানোর ব্যবস্থা করে তারা হলো সিনেমাওয়ালা! যেমনটি মাছওয়ালা করে থাকে, মাঝির ভরসা তো তারাই।
সিনেমাটি সবার জন্য না। সিনেমাটা বেশ স্লো কিন্তু কথা হচ্ছে এটাতে অপ্রয়োজনীয় সিন কমই রয়েছে। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে সিনেমার ভাষা পরিবর্তন হচ্ছে, সাথে সাথে পরিবর্তন ঘটছে এর মাধ্যমের। এই মাধ্যমের পরিবর্তনে অনেক সিনেমাওয়ালাই অকূল সাগরে নৌকা হারিয়েছে, হয়েছে নিঃস্ব। তার জ্বলন্ত উদাহরণ তো আমরা বাংলাদেশেই দেখতে পাই। সিনেমা হলের সংখ্যা নেমে হইতো এখন একশরও কম। যেখানে সংখ্যাটি নাকি তেরেশো চৌদ্দশো প্লাস ছিলো। এখান থেকে কতজনই যে সিনেমাওয়ালা থেকে মাছওয়ালা হয়েছেন তার কি কোনো হিসাব রয়েছে? না। সিনেমাওয়ালা থেকে মাছওয়ালা হয়ে যাওয়া সেইসব সিনেমাপ্রেমিরা কি সিনেমা ভুলে গেছেন? না পারবেন? আমার মতে তো পারার কথা না, তবুও জীবন তো আর এতো সোজা না যে এর উত্তর এক কথায় হয়ে যাবে। সিনেমাওয়ালা সিনেমাটি এক নিঃস্ব সিনেমাওয়ালারই কাহিনী যে কিনা সিনেমার জন্য তার অকৃত্তিম ভালোবাসা, না ভালোবাসা না ঠিক, প্রেম কে কৃত্তিমতার আড়ালে ঝেড়ে ফেলতে পারে নি।
সিনেমার ইতিহাস নিয়ে যারা একটু নাড়াচাড়া করে, তাদের আসলে এর থেকে বের হওয়াটা কঠিন। সত্যি বলতে আমি নিজেই অনেকটা এইভাবেই ফেঁসে গিয়েছি। কি জানি কি চিন্তা থেকে সিনেমার ভূত ঢুকলো। এখন তো ফিল্মমেকার হতে চাই। ব্যাপারটা বাসার অন্যদের জন্য প্যারাদায়ক। কই ছেলে হওয়ার কথা ডাক্তার, ব্যারিস্টার, হতে চায় এখন ফিল্মমেকার। এই অবস্থার জন্য কিন্তু আমাদের দেশের সিনেমাওয়ালাদের দূরবস্থাই দ্বায়ি। সিনেমাওয়ালা যাদের কিনা সিনেমা নিয়ে ব্যবসা, সেই ব্যবসাই তো নেই। সব সিনেমাওয়ালা এখন পালাতে পারলেই বাঁচে। মাছওয়ালাদের ব্যবসা কিন্তু এর থেকে অনেক ভালো। আর এ খবর তো আমার চালাক পরিবার বুঝে গেছে, আসলে সবাই বুঝে গেছে। তাই তো এখন শুধু আমার না, আমার মতো যারা ফিল্ম নিয়ে কাজ করতে চায় তারা নিজেদের ফেঁসে যাওয়া কাক মনে করছে। আমরা ভাবছি হাগবো তো আমরা মাটিতেই, ওদের কি সমস্যা। কিন্তু ওরা যে আমাদের নিচেই এসে দাঁড়িয়ে থাকবে তা তো তারা বুঝিয়েই দিচ্ছে।
সিনেমাটা সিনেমার প্রতি ভালোবাসা থেকে বানানো। সিঙ্গেল স্ক্রিন হল সংকট যে কলকাতায় বাংলাদেশের মতোই দেখা দিয়েছে। সিঙ্গেল স্ক্রিন হলগুলোর মালিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে। জানি না সবার ছবিটি দেখে ভালো লাগবে কিনা, তবে আমার লেগেছে। অভিনয়ে তাদের একটা জিনিষ আমায় খুব আকর্ষণ করে আর তা হলো তাদের ভালন্যারাবিলিটি। চরিত্রকে শুধু নিজের মাঝে ধারণ করাই নয়, তাতে বাঁচতে শিখা। অভিনেতাদের স্যালুট, অনেক অনেক ভালোবাসা।
সিনেমাকে বাঁচাতে হলে ভালো ফিল্মমেকার লাগবে, তার জন্য ভালো সিনেমাওয়ালা লাগবে, আর তাকে বাঁচাতে হলে হলগুলো বাঁচাতে হবে। যদিও ব্যাপারটাকে আমরা উলটোভাবেও দেখতে পারি।
ধন্যবাদ!
Comments